নবীগঞ্জে মোবাইল চুরির হিরিক \ ৬টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি \ নবীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে মোবাইল চুরির হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিন কোন কোন স্থান বা ভিআইপি বিভিন্ন প্রোগ্রাম থেকে মোবাইল চুরি হচ্ছে। মোবাইল চোরচক্র বেঁচে নিয়েছে বড় বড় জনসভা, ইসলামি সভা ও সরকারী অফিস আদালত। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব চুরি সংগঠিত হচ্ছে। এদিকে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ গত বৃহস্পতিবার বিশেষ অভিযান চালিয়ে অভিযান ৬টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেছে।
জানা গেছে- শীতের মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে ওয়াজ মাহফিল হয়ে থাকে। এসব ওয়াজ মাহফিলে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তাগনের আগমন ঘটলে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হন।
তখন মোবাইল চোরাচক্র সেখানে জটলা সৃষ্টি করে মোবাইল চুরি করে থাকে। গত দুই মাসে নবীগঞ্জে প্রায় শতাধিক মোবাইল চুরি হয়েছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এসব জনপ্রিয় কোথায় আসে তারা খোঁজ খবর নেয়। কারণ ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। এছাড়া বিভিন্ন বড়বড় দরবার গুলোর মাহফিলের খোঁজ নেয় সেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।
নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি আন্তর্জাতিক সুন্নী কনফারেন্সে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। এখানে থেকে ৪০/৫০টি মোবাইল চুরি হয়, ওই সভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের মোবাইলও চুরি হয়। ওইদিন ৩ জন মোবাইল চুরকে জনতা আটক করলে পুলিশ তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে জেল হাজতে প্রেরণ করে। নবীগঞ্জ শহরে মোবাইল বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও আলোচনা সভায় ইদানিং মোবাইল চুরি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব চুরির সাথে নবীগঞ্জের কিছু চিহিৃত লোক জড়িত রয়েছে। এদের কাছে থেকে স¤প্রতি অনেক মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। এসব মোবাইল চোর চক্র বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও ব্যাংক বীমার সামনে ওৎ পেতে থাকে তারা বিভিন্ন কৌশলে মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা ও সিলেট শহরের করিম উল্লাহ মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেটে মোবাইল বিক্রি করে চোরচক্র।
নবীগঞ্জ শহরের মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা আনমনুর গ্রামের দারগা মিয়ার পুত্র বাদল আহমদ (৩৬)। তাকে সহযোগিতা করেন পৌর আওয়ামীলীগ নেতা ও নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নানু মিয়া। বাদল মোবাইল চুরি, বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার চুরিসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। তার এক অঙ্গে অনেক রুপ সে কখনও মোবাইল মেকার, কখনও ইলেকট্রনিক দোকান কর্মচারী, কখনও সাংবাদিক, কখনও রাজমিস্ত্রী পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে নানা রকম প্রতারণা করে আসছে। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত লেখা পড়া চোরা বাদল নিজেকে কখনও সাংবাদিক পরিচয় ফেইসবুকে নানা অপপ্রচার করে বেড়ায়। ফেইসবুক পেইজে ভুলবাল পোষ্ট দিয়ে সাংবাদিক সমাজের মানহানী করে যাচ্ছে। অতি স¤প্রতি বাগাউউড়া গ্রামের একব্যক্তির মোবাইল নবীগঞ্জ শহর থেকে চুরি হলে সেই মোবাইলটি নবীগঞ্জ থানার এসআই পরিমল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট শহরের করিম উল্লাহ মার্কেটের ইসলাম টেলিকম থেকে উদ্ধার করে। সেখানে মোবাইলটি বিক্রি করেন আনমনু গ্রামের বাদল আহমদ। পরে পুলিশ বাদল আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করে। পরে সাবেক কাউন্সিলর নানু মিয়া মাধ্যমে টাকা ফেরত দিয়ে মুক্তি পায়। ইদানিং বাদল এর নেতৃত্বে মোবাইল ও ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন।
দিনারপুরের রফিক মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান- কয়েকদিন আগে নবীগঞ্জ শহরে একটি কাজে গিয়েছিলাম, হঠাৎ হাত থেকে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে দৌড় দেয় একটি যুবক, পরে আর তাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।
দেওতৈল গ্রামের সাফি বলেন- নবীগঞ্জে মোবাইল চুরি বেড়ে গেছে, গত কিছুদিন আগে নতুন বাজার পয়েন্ট থেকে আমার বোনের মোবাইল চুরি হয়।
এ বিষয়ে এসআই পরিমলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন চোরাই মোবাইলের বিক্রির টাকা বাদল ফেরত দিয়েছেন।
নবীগঞ্জ থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের ধরতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের মোবাইল সনাক্ত করা সম্ভব। তিনি বলেন কারো মোবাইল চুরি হলে থানায় জিডি করলে আমরা সেটা উদ্ধারে চেষ্টা করবো। নবীগঞ্জ থেকে চুরি হওয়া মোবাইল আমরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রাষ্মন বাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার ধরমন্ডল থেকে অভিযান চালিয়ে ৬টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেছি।