পদত্যাগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন পিডিবিএফ ধ্বংসের মূল হোতা মউদুদ
৮৪ Views
স্টাফ রিপোর্টারঃ পল্লি অঞ্চলের দারিদ্র্য দূরীকরণে গড়ে ওঠা পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মউদুদ উর রশীদ সফদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংস্থার টাকা ব্যাংকের বদলে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে জমা করে লুটেছেন কোটি টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলেই কপালে জুটেছে শাস্তিমূলক বদলি, শোকজ ও লাঞ্ছনা।
অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক ২য় বার নিয়োগপ্রাপ্ত পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মউদুদ উর রশীদ সফদার এর সীমাহীন দুর্নীতি, দুঃশাসন, স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল শনিবার পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের দেড় শতাধিক বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা- কর্মচারী।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিগত প্রায় ৪ বছরে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কতিপয় কর্মকর্তার দৌরাত্ব বৃদ্ধি, একাধিক কর্মচারি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তর্দ্বন্ধ, অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় দুই দুই বার চাকরিচ্যুত বজলুর রশীদ নামক এক অর্থলোভী কর্মকর্তাকে ব্যবহার এবং সহকর্মীদের সাথে দ্বৈতনীতির চর্চা ও শঠতার কারনে প্রতিষ্ঠানটির আজ বন্দীদশা। বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি, ব্যাপক বদলী বাণিজ্য, অনেতিক উপায়ে উচ্চতর পদে পদায়ন ও নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ঋণ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে মাঠ কার্যক্রম মনিটরিং ও তদারকি। বিগত প্রায় ৪ বছরে মাঠ পর্যায়ে কোন তদারকি না থাকায় একদিকে খেলাপীর পাহাড় জমেছে অন্যদিকে অর্থ আত্মসাত বেড়েছে ব্যাপক হারে। ফলে বিগত প্রায় ৪ বছরে তিন শতাধিকেরও অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে বিগত ৩ বছরে অবসরে যাওয়া প্রায় ১৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারিকে দেয়া হয়নি তাদের অবসরোত্তর পাওনাদী। অবসরপ্রাপ্তদের পাওনা আটকে তাদের কষ্টে রেখে উক্ত অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করে প্রতিষ্ঠানের স্বয়ম্ভরতা বেশী দেখানো হয়েছে। অপেশাদারী মনোভাবাপন্ন ও মাইক্রোফাইন্যান্স কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মউদুদউর রশীদ সফদার এর ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রাস করে ফেলেছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় প্রায় ৫০জন কর্মকর্তা/কর্মচারিকে বিনা দোষে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বক্তারা আরোও বলেন, সফদার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত সাড়ে ৪ বছরে প্রায় ২০০০ (দুই হাজার) এরও বেশী কর্মকর্তা-কর্মচারিকে অর্থের বিনিময়ে উচ্চতর পদে পদায়ন ও বদলী বাণিজ্যের মাধ্যমে অনৈতিক উপায়ে ২০-২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পিডিবিএফ-এর প্রধান কার্যালয় বর্তমানে মিরপুর-২ এর হাজী রোডে কমার্স কলেজ সংলগ্ন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একটি ০৫ কাঠা জমির উপর ২০০৪ সালে নির্মিত লিফট বিহীন একটি ৬ তলা জড়াজীর্ণ ভবনে অবস্থিত। ভবনটি একটি বেসরকারী ব্যাংকে মর্গেজ থাকায় তা টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে। পিডিবিএফ উক্ত টেন্ডারের অংশ গ্রহণ করে ব্যাংকের সাথে পারস্পারিক যোগসাজোসে বাড়িটি ১৬.০০ (ষোল) কোটি টাকায় ক্রয়ের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। জমি সহ ভবনটির প্রকৃত সর্বোচ্চ মূল্য ০৫ (পাঁচ) কোটি টাকা যা ১৬ (ষোল) কোটি টাকায় ক্রয় করে ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সফদার। সুফলভোগী সদস্যদের জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা পি.কে হালদার এর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সহ একধিক লিজিং কোম্পানীতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা রেখে কমিশন গ্রহণের অপরাধ সহ ৬৫০ কোটি টাকা তছরুপ এর ঘটনায় মন্ত্রনালয় এর তদন্ত রিপোর্টে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পিডিবিএফ বোর্ড এর সিদ্ধান্তে দায়েরকৃত সি.আর মামলা (নং-৪৩৯/২০২০) থেকে অব্যাহতি দেয়ার অপচেষ্টায় মামলাটি ৩ বছর নিষ্ক্রিয় করে রাখা। অবশেষে সবাইকে মুক্ত করেন তিনি।
এছাড়া রিসিডিউলের এর মাধ্যমে খেলাপী কমিয়ে বোর্ড সভায় অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেন, যা বিগত ২০ বছরে কোন এমডি করেননি। প্রকৃত ঋণ আদায় হার ৫০-৬০% এবং আর্থিক স্বয়ম্ভরতা (ঝঝজ) সর্বোচ্চ ৬০-৭০%। অথচ বিগত বোর্ড সভায় ঋণ আদায় হার ৯৮-৯৯% এবং আর্থিক স্বয়ম্ভরতা (ঝঝজ) ১২৭% দেখানো হয়। ক্ষুদ্র ঋণ ৫২ সপ্তাহ এবং নারী উদ্যোক্তা ও স্মল এন্টারপ্রাইজ ঋণ ১২ মাসের জন্য দেয়া হলেও খেলাপী কম দেখানোর উদ্দেশ্যে তা যথাক্রমে ১০৪ সপ্তাহ এবং ২৪ মাসে পরিশোধ দেখানো হয়।
বোর্ডের অনুমোদন ব্যতিরেকে এবং ঋণ পরিচালন নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রায় ০৪(চার) লক্ষ সুফলভোগী সদস্যের সঞ্চয় এর প্রায় ২০০ (দুইশত) কোটি টাকা তাদের অজ্ঞাতে খেলাপী ঋনের সাথে সমন্বয়ের নামে তছরুপ। মৃত সুফলভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকাও সমন্বয় করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
এছাড়া, এডিপি ভুক্ত “আলোকিত পল্লী সড়কবাতি”- প্রকল্পের ১ম ও ২য় দরদাতাকে বাদ দিয়ে টেন্ডারে কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ৩য় দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করে সরকারি অর্থ তছরুপ করেন পরিচালক। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম সংঘঠিত হয়েছে। তদন্ত করলে সকল অনিয়ম বেরিয়ে আসবে। উল্লেখ্য, প্রকল্প সমাপ্তির পরে প্রকল্প পরিচালক কর্তৃক বিধি মোতাবেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৪.০০ কোটি টাকার চেক প্রদান করা হলেও এমডি তার কাঙ্খিত উৎকোচ না পাওয়ায় প্রদানকৃত চেক অনৈতিকভাবে বাতিল করে সম্পূর্ন অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে অদ্যাবধি আটকে রেখেছেন। জনতা ব্যাংক, চেক নং-৪২০৬৫৪৮। মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ৬৫০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পিডিবিএফ বোর্ড অব গভর্র্নস এর ৭৬ ও ৭৮তম সভার সিদ্ধান্তে দায়েরকৃত সিআর মামলা থেকে অভিযুক্তদের সুকৌশলে মুক্তির ব্যবস্থা করেন তিনি।
২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিগত ৪ বছরে প্রকৃতপক্ষে মোট খেলাপী বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০০০ (এক হাজার) কোটি যা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া একাধিকবার পুনঃতফশিলীকরন সহ নানা অপকৌশলের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য গোপন করে খেলাপী ঋণের পরিমান অস্বাভাবিকভাবে কম দেখানো হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানের মূলধন ক্ষয় হয়ে এখন সুফলভোগীদের নিকট হতে আহরিত সঞ্চয়, সরকার প্রদত্ত্ব প্রনোদনার অর্থ আর কর্মকর্তা/কর্মচারিদের জমাকৃত সিপিএফ-গ্রাচ্যুইটির অর্থে পরিচালিত হচ্ছে পিডিবিএফ।
এমডি পদে থেকে অনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজস্ব কোম্পানী রূপান্তর এডভার্টাইজিং এর নামে নিজস্ব ঠিকাদার মি. সমর এর মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূভাবে কোটি কোটি টাকার অত্যন্ত নিম্নমানের মুদ্রণ সামগ্রী ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল ক্রয়। রুপান্তর এডভার্টাইজিং একটি কাগুজে কোম্পানী যার কোন অস্তিত্ব নেই।
আইন খরচের নামে বাজেট বহির্ভুতভাবে কোটি কোটি টাকা লোপাটসহ প্রনোদনার ঋণ নিয়ে নয় ছয় এর মাধ্যমে সরকার পদত্ত ৩০০ কোটি টাকা তছরুপ। তদারকির অভাবে ব্যাপকভাবে খেলাপী হচ্ছে প্রনোদনা ঋণ। আদায়ের হার ৬০% এরও নীচে। কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত বন্ধুর নিকট হতে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে প্রনোদনার অর্থ সহ পিডিবিএফ এর ১ হাজার ৫০০ শত কোটি টাকা লোকসানী কৃষি ব্যাংকে এফডিআর। দেশের দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে সরকারের অনুদান এবং প্রতিষ্ঠানের অর্থ এফডিআর করে স্বয়ম্ভরতা বেশী দেখানো পিডিবিএফ আইন সম্মত নয়। দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গঠিত প্রতিষ্ঠানের টাক দারিদ্র্য মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারের এডিপভুক্ত প্রকল্প, সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত প্রনোদনার ৩০০ কোটি এবং পিডিবিএফ নিজস্ব তহবিল ঋণ বিতরণ ব্যাপকভাবে হ্রাস করে বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল অংকের টাকা এফডিআর করেন যা পিডিবিএফ আইন এর সাথে সাংঘর্ষিক।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ঠ মউদুদকে প্রথমবার তিন বছরের জন্য অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান এবং মেয়াদ পূর্তির পূর্বেই দ্বিতীয়বার পুনরায় পরবর্তী ৩ বছরের জন্য অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর দাবি জানান তারা।