রবিবার- ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ -৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ English Version

বিরলের তেঘরায় রাস্তা নির্মাণ নিয়ে দ্ব›দ্ব সম্মূখভাগের ন্যায় প্রশস্ত দাবি অপরপক্ষের দাবিব্যক্তিগত জায়গায় একটু কম প্রশস্ত

বিরলের তেঘরায় রাস্তা নির্মাণ নিয়ে দ্ব›দ্ব সম্মূখভাগের ন্যায় প্রশস্ত দাবি অপরপক্ষের দাবিব্যক্তিগত জায়গায় একটু কম প্রশস্ত

আতিউর রহমান, বিরল (দিনাজপুর):; প্রায় বছর দশেক আগে গ্রামের অজো পাড়াগায়ে চলাচলের জন্য একটি রাস্তার কথা চিন্তা করে পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে চলেন মুরব্বিরা। পরিকল্পনার এক পর্যায়ে সোয়া ২ শতক জমি ক্রয় করে গ্রাম থেকে শহরে প্রবেশ পথের সাথে সংযোগ করে ৮ ফুট প্রস্থের একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। বর্ষাকালে প্রচুর কাদাপানি জমে রাস্তায় চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় গত ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাস্তাটি পাকাকরণ এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ১ম পর্যায়ে রাস্তাটি পাকা করার পর আশপাশের পরিবারগুলোসহ এলাকার কৃষকবৃন্দ স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করে আসছেন। এরপর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে ২য় পর্যায়ে রাস্তা পাকাকরণ কাজের জন্য গেলে প্রস্থ নিয়ে শুরু হয় বিরোধ। ঘটনাটি উপজেলার ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের তেঘরা মহেশপুর মৌজার সরকারপাড়ার। একটি পাশর্^ রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বিরোধ এখন টপ অব দ্যা উপজেলায় পরিণত হয়েছে।
ওই রাস্তা ব্যবহারকারী আলহাজ¦ মোঃ লুৎফর রহমান জানান, তাঁর পিতা আলহাজ¦ আব্দুল হামিদ রাস্তার জন্য আব্দুল ওয়ালিদ (মঙ্গলু) ও আবুল হোসেন এর নিকট সোয়া ২ শতক জমি ক্রয় করেন। গ্রাম থেকে শহরে প্রবেশের পাকারাস্তার সংলগ্ন জমির মধ্যখানে জমির মালিক হুসেন আলী। কিছু অংশ ওয়াকফ স্টেটের যা জনসাধারণের ব্যবহার্য্য। অবশিষ্ট কিছু অংশ মনছুর আলী গংয়ের। ধানের মৌসুমে ধান মাড়াই মেশিন, হারভেস্টর মেশিন, পাওয়ার টিলারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে যাতায়াতে যেন কোন কষ্ট না হয় এ রাস্তা দিয়ে ওই পাড়ার প্রায় ৪০ টি পরিবার ও কৃষি কাজের সাথে জড়িত ২ শতাধিক কৃষক যাতায়াত করেন। আলহাজ¦ আব্দুল হামিদ অসুস্থ হওয়ার পর মনছুর আলী গং রাস্তা যেন না হয় তালবাহানা শুরু করে। ইতিমধ্যে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে আলহাজ¦ আব্দুল হামিদ মারা যান। এ অবস্থায় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য ১ টি আম গাছ রোপন করে মনছুর আলী গং। পরবর্তীতে আলহাজ¦ আব্দুল হামিদ এর ছেলে গোলাম মোস্তফা গোলাপ গংয়েরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ দায়ের করলে তৎকালীন চেয়ারম্যান তোসাদ্দেক হোসেন তেঘরা সমাজ কল্যাণ সমিতিতে আলোচনার জন্য স্থান নির্ধারণ করেন। প্রায় ২ দিন যাবৎ দফায় দফায় আলোচনার পর ক্লাবের প্যাডে লিখিতভাবে উভয়পক্ষের সম্মতিতে ১ টি রাস্তা তৈরীতে সম্মত হয় উভয়পক্ষ। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারি অর্থায়নে আলহাজ¦ আব্দুল হামিদ ও আবুল হোসেন এবং ওয়াকফ স্টেটের জায়গায় মনছুর আলীর বাড়ীর দরজা পর্যন্ত পাকারাস্তা নির্মাণ করা হয়। এরপর বরাদ্দের জন্য অপেক্ষায় থাকা রাস্তায় এখন বরাদ্দ আসলে নির্মাণ কাজে বাঁধা আসে। স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা আলোচনা করলে মনছুর আলী গংয়েরা তাদের বাড়ীর পরে ৫ ফুট প্রস্থে ড্রেনসহ রাস্তা দিয়ে নিজেদের দেয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত)সহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অবগত করলে কাগজপত্র যাচাই করে রাস্তা নির্মাণ কাজ করা হবে ও দেয়াল নির্মাণ কাজ সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য বললেও কোন কর্ণপাত করা হয়নি। সম্মূখভাগে ৮ ফুট প্রস্থ থাকলেও পিছনে ৫ ফুট প্রস্থ রেখে ২-৩ দিন পর আবারো দেয়াল নির্মাণ কাজ করা হলে সম্মূখভাগের রাস্তা দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যেতে নিষেধ করা স্বত্তে¡ও না শোনায় সাময়িকভাবে রাস্তাটি বন্ধ রাখার জন্য ক্রয়কৃত অংশ পর্যন্ত অস্থায়ী একটি দরজা স্থাপন করা হয়। যা সম্মূখভাগের ন্যায় পিছনের অংশে প্রস্থ রাখা হলে তাৎক্ষণিক দরজাটি অপসারণ করা হবে। প্রশাসনের বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে পিছনের অংশে রাস্তা সংকুচিত করায় সম্মূখভাগের ক্রয়কৃত অংশে দরজা সাময়িকভাবে দেয়া হয়েছে যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা কামনা করে লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে।
এ কে এম শরিফ উদ্দিন, হযরত আলী, নুরুজ্জামান মানিক, আপেল, শাহিনুর ইসলাম, মোঃ জামাল উদ্দিন মাস্টারসহ স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি এককভাবে কোন একটি পরিবারের জন্য নয় বরং পুরো এলাকাবাসীর যাতায়াতের জন্য। তাই সম্মূখভাগের ন্যায় পিছনেও প্রস্থটা থাকলে অনায়াসে এ্যাম্বুলেন্সসহ যে কোন কৃষি যন্ত্রপাতি ও যানবাহন যাতায়াতে সুবিধা হতো।
মনছুর আলীর ভাইয়ের ছেলে জাহিদ হোসেন জানান, এটা কোন রেকর্ডিয় রাস্তা না। আমরা ক্লাবে গিয়ে কোন লিখিত দেইনি। মনছুর আলী যেটা লিখিত দিয়েছিলেন উনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি পর্যন্ত উনি রাস্তা দিয়েছেন। মনছুর আলীরা ৬ ভাই। ৬ ভাইয়ের কেনা জমিতে প্রশস্ত রাস্তার কোন দরকার নাই। এদিকে তেমন কোন যানবাহন আসে না। পিছনে ৩ টা বাড়ী আছে। তাদেরসহ কৃষকদের যাতায়াতের জন্য ৫ ফুট প্রশস্তের রাস্তা রাখা হয়েছে। পিছনের বাড়ীওয়ালাদের সামনে মেইন রোডের পাশে জায়গাও আছে। যে দাবি করছে তাদের রাস্তার জন্য ৭ ফুট প্রশস্তের রাস্তা দিতে হবে, তাদের পিছনের জমি প্লট আকারে বাড়ী করার জন্য, মিল চাতাল করার জন্য। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জায়গায় তাদের ইচ্ছেমত কেন জায়গা দিবো? আমরা ৫ ফুট জায়গা দিয়েছি, ভ্যান-রিক্সা যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমাদের জায়গায় পাকা রাস্তা হবে আমাদের অর্থায়নে আমরা যদি করতে পারি, আমাদের সরাকারি অর্থে পাকা রাস্তার প্রয়োজন নাই। আমার ব্যক্তিগত জায়গার উপর কারো হস্তক্ষেপ মেনে নেয়ার মত না। একটা রাস্তা যৌথভাবে হয়েছে আমাদের যতটুকু দেয়ার প্রয়োজন ছিল বা আমার বড়আব্বা মনছুর আলী তাঁর ব্যক্তিগত যতটুকু জায়গা দিয়েছেন সে পর্যন্ত হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুসেন আলী জানান, রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদ হতে প্রকল্প গ্রহণ করে জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে বরাদ্দ মোতাবেক অনেকটা কাজ হয়েছে। কিন্তু তাদের দ্ব›েদ্বর কারণে এবার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সরজমিনে বিষয়টি দেখে গেছেন। উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কাজটি করার জন্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পিছনের অংশে ৫ ফুট প্রশস্ত জায়গা ছেড়ে দেয়াল নির্মাণ করায় প্রকল্পের ৭ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS